ম্যাজিক লণ্ঠন ডেস্ক
প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০২২ ১২:০০ মিনিট
অন্যকে জানাতে পারেন:
কাশ্মীরে ২৩ বছর পর খুলছে সিনেমা হল
ম্যাজিক লণ্ঠন ডেস্ক
ভারতের কাশ্মীরে দীর্ঘ ২৩ বছর পর অপেক্ষার পর অবশেষে বড়ো পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পাচ্ছে কাশ্মীরিরা। এর ফলে ভারতের সবচেয়ে সংঘাতময় এই অঞ্চলে আবারও প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বড়ো পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরে এ জন্য ইনক্স মাল্টিপ্লেক্সকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এ মাল্টিপ্লেক্সের একাধিক শাখা রয়েছে।
তবে কাশ্মীরে এ মাল্টিপ্লেক্সটি দাঁড় করানোর পিছনে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চালাতে হয়েছে। বাবাকে নিয়ে ভিকাশ ধর এটি চালু করতে প্রায় চার বছর টানা কাজ করেছেন। আট কক্ষের একটি গেস্ট হাউজ ভেঙ্গে তারা এ প্রেক্ষাগৃহটি প্রস্তুত করেছেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারকা আমির খানের লাল সিং চাড্ডা প্রদর্শনের মাধ্যমে এ প্রেক্ষগৃহটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। এই মাল্টিপ্লেক্সে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমসহ মোট তিনটি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে।
আজ শনিবার থেকে দুটি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হবে। পাশাপাশি এই মাল্টিপ্লেক্সে শিশুদের জন্য আলাদা একটি জোনও রাখা হয়েছে।
২৩ বছর পর প্রেক্ষাগৃহ চালু হওয়া প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের লে. গভর্নর মনোজ সিনহা আজকের দিনকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘এটি এখানকার মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নের নতুন সূচনা।’
৯০ দশকের শুরুতেও ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ অঞ্চলটিতে অসংখ্য প্রেক্ষাগৃহ ছিলো। শুরু শ্রীনগরেই সেসময় প্রায় ১০টি প্রেক্ষাগৃহ ছিলো। এছাড়া বলিউডের অনেক চলচ্চিত্রের শুটিং কাশ্মীরে করা হতো। কিন্তু ৮০’র দশকে এ অঞ্চলে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই শুরু হলে প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
কারণ সহিংসতা জোরদার হলে সশস্ত্র গোষ্ঠী আল্লাহ টাইগার্স সেখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও মদের দোকানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফতুয়া দেয়। পরে এসব কমপ্লেক্সগুলোর অধিকাংশই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হয়। আর বাকিগুলো কিছু পরিবর্তন করে দোকানপাট ও হাসপাতাল তৈরি করা হয়।
তবে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার প্রেক্ষাগৃহ চালুর উদ্যোগ নিলে শীনগরের রিগ্যাল সিনেমা হলে রক্তক্ষয়ী হামলা হয়। এবং পর সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়।
শ্রীনগরের পুরনো প্যালাডিয়াম সিনেমা হলের মালিক মনমোহন সিংহ গৌরি। তিনি নিজেদের সর্বশেষ সিনেমা প্রদর্শনের কথা স্মরণ করে জানান, ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ সিনেমা দেখিয়েছিলেন। ভিনোদ খান্নার মহা বদমাশ চলচ্চিত্র সর্বশেষ তার সিনেমা হলে দেখানো হয়েছিলো।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে গৌরির দাদা শ্রীনগরের লালচক এলাকায় ওই প্রেক্ষাগৃহটি হলটি চালু করেছিলেন। প্রায় ছয় দশক মানুষকে বিনোদিত করলেও ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তা পুড়িয়ে দেয়া হয়।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের সহিংসতার কারণে পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে পালিয়ে যাওয়া গৌরি এখন সিনেমা হল চালুর মাধ্যমে আবারও পারিবারিক অবকাঠামো চালু করতে উৎসাহিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে দেশটির নরেন্দ্র মোদীর সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে প্রশাসনিক অঞ্চল চালুর ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করে। স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করলেও সরকার ওই অঞ্চলের জনমিতিও পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন